শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৫ পূর্বাহ্ন
বিশেষ প্রতিনিধি : এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান;/জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ-পিঠে/চলে যেতে হবে আমাদের।’ কবি সুকান্তের বিখ্যাত কবিতা ‘ছাড়পত্র’। আর এখন দেশের নামকরা বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই ছাড়পত্র (টিসি) শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মানসিক নিপীড়নের হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরীক্ষায় ফল খারাপের অজুহাতসহ নিয়ম-শৃঙ্খলায় একটু এদিক-সেদিক হলেই শিক্ষার্থীদের টিসি ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে শিশু-কিশোরদের মনোবিকাশে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। নিয়ম অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে জোরপূর্বক টিসি দিতে পারবে না। টিসি দেওয়ার এখতিয়ার শুধু শিক্ষা বোর্ডের। স্কয়ার হাইস্কুল এ্যান্ড কলেজের ৬ জনছাত্র দুষ্টুমি করার প্রতিষ্ঠান থেকে চাপপ্রয়োগের মাধ্যমে টিসি ও সাদাকাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। তারপর অভিভাবকরা বিভিন্ন চেষ্টা তদবির করেও তাদের টিসি ঠেকাতে পারেননি। ভুক্তভোগী এক ছাত্রের মা জানান, আমার ছেলে লেখাপড়া করেও নিজ স্কুল থেকে পরীক্ষা দিতে পারেনি। তীব্র মানসিক যন্ত্রণায় পুরো পরিবার ।কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী, শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী অথবা অকৃতকার্য কোনো শিক্ষার্থীকে ইচ্ছে করলেই কোনো প্রতিষ্ঠান টিসি দিতে পারবে না।
রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে জোরপূর্বক টিসি প্রদান এখতিয়ারবহির্ভূত। টিসি দেওয়ার এখতিয়ার শুধু বোর্ডের। চলতি বছরের জানুয়ারিতে এ সংক্রান্ত একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তি জারি করে।এতে বলা হয়, কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অকৃতকার্য বা শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী শিক্ষার্থীদের নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে টিসি প্রদান করছে। কোনো শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হলে তাকে পূর্ববর্তী শ্রেণিতে রেখে যথাযথ শিক্ষাদানের মাধ্যমে মানোন্নয়নের ব্যবস্থা করতে হবে এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে রাজশাহী বোর্ডের মাধ্যমে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে টিসির অনুমতি নিতে হবে। জোরপূর্বক টিসি দিলে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানায় বোর্ড কর্তৃপক্ষ।রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা যায়, দেশের বেশ কিছু নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতি বছর দুর্বল শিক্ষার্থীদের বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নিতে দিত না। এ ধরনের অভিযোগ ছিল স্কয়ার হাই স্কুল এ্যান্ড কলেজ পাবনা সদরের প্রিন্সিপাল বিরুদ্ধে।অভিভাবকগন বলেন, ‘টিসিকে হাতিয়ার করে স্কুল-কলেজগুলো অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে। ইচ্ছা করলেই কোনো শিক্ষার্থীকে টিসি দিতে পারে না। কোনো শিক্ষার্থী শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে তাকে সংশোধন করতে হবে। সংশোধনের জন্যই বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানো হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘এ ধরনের অপরাধ দেখার জন্য কোনো মনিটরিং নেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় গভর্নিং বডি বাণিজ্য নিয়েই ব্যস্ত থাকে।
অভিযোগ আছে, স্কয়ার হাইস্কুল এ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল খতিব শাহনাজের এর স্বেচ্ছাচারিতা, দূর্ব্যবহার, অনিয়মে শিক্ষা জীবন বিপন্ন ৬ শিশু শিক্ষার্থীর। কোন শিক্ষার্থী যদি শৃঙ্খলা বহির্ভূত কাজ করে তবে প্রথমেই সেই শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের জানানো বা ওয়ার্নিং প্রদান করা উচিত ছিল যা প্রিন্সিপাল করেননি এবং এটি বিধি বহির্ভূত ।বিভিন্ন সময় অভিভাবক সমাবেশে প্রিন্সিপালের দূর্ব্যবহারে মুখ খুলতে পারেন না অভিভাবকরা। পান থেকে চুন খসলেই যেখানে নোটিশ দেয়া হয় সেখানে অভিভাবকদের না জানিয়ে শিক্ষার্থীদের রুমে আটকিয়ে অশালীন বাক্য বলে লিখিত আদায় করেন যা প্রিন্সিপাল করতে পারেন না এবং শিশু বিকাশ পরিপন্থী।গত ১৩ ই মার্চ ৬ জন শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি দেখিয়ে লিখিত আদায় অভিভাবকদের অনুপস্থিতিতে। ১৪ ই মার্চ কল করে বলা শিক্ষার্থীরা যেন বিদ্যালয়ে না যান। পরে বিভিন্ন সময়ে অভিভাবকদের বলা হয় – টিসি নিয়ে যেতে। আবেদনের কথা বলা হয়েছে কিন্তু বাস্তবে কোন শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের থেকে আবেদন নেয়া হয়নি। এটি সরাসরি মিথ্যাচার ।
স্কয়ার হাই স্কুল এ্যান্ড কলেজ পাবনার প্রিন্সিপাল খতিব শাহনাজ সুলতানা জানান, শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে টিসি দেওয়া হয়েছে। আপনি নিউজ করবেন না, প্রয়োজনে আপনি পাবনা আসুন। স্কুলের সভাপতি সাথে কথা বলে নিউজ করবেন বলে জানান প্রিন্সিপাল।এ বিষয়ে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. অলীউল আলম বলেন, ‘সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইচ্ছে করলেই কোনো প্রতিষ্ঠান টিসি দিতে পারবে না। জোরপূর্বক টিসি দিলে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো শিক্ষার্থীকে জোর করে টিসি দিলে লিখিত অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।